ঈদুল ফিতরের পর থেকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আবারো ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে তুলনামূলকভাবে সংক্রমণ বেশি বাড়ছে। দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে এই চিত্র পাওয়া গেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী ১৫ জেলায় সংক্রমণ বৃদ্ধি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তাদের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। সাধারণ মানুষও রয়েছেন উদ্বিগ্ন।
১৭ থেকে ২৩ মে—এই এক সপ্তাহের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গতকাল বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, আগের সপ্তাহের (১০ থেকে ১৬ মে) তুলনায় ২২টি জেলায় নতুন রোগী বৃদ্ধির হার শতভাগ বা তার বেশি ছিল। এগুলোর মধ্যে ১৫টি জেলাই সীমান্তবর্তী। এই জেলাগুলোর মধ্যে নয়টির প্রতিটিতে এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পঞ্চাশের নিচে। সংখ্যায় কম হলেও হঠাৎ করে এক সপ্তাহের ব্যবধানে শতভাগের বেশি রোগী বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে শঙ্কা হিসেবে দেখছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৬ মে এই এক সপ্তাহের তুলনায় ১৭ থেকে ২৩ মে এই এক সপ্তাহে দেশের ২২টি জেলায় রোগী বৃদ্ধির হার শতভাগ বা তার চেয়ে বেশি। এই জেলাগুলোর মধ্যে আছে ভারতের সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, লালমনিটরহাট, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, রাজশাহী, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, জামালপুর, রাঙামাটি ও বান্দরবান। এ ছাড়া এই তালিকায় আছে নাটোর, গাইবান্ধা, খুলনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, কক্সবাজার ও নরসিংদী।
এক সপ্তাহে ১০১ থেকে ৫০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এমন জেলাগুলোর মধ্যে সীমান্তবর্তী সাতটি জেলা হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও সিলেট। এ ছাড়া এই তালিকায় আছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, নোয়াখালী ও গাজীপুর।
করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য বিশেষ লকডাউন চলছে। তারপরেও সেখানকার অনেকে রাজশাহী ও ঢাকায় যাচ্ছেন। এক সপ্তাহে (১৭–২৩ মে) এই জেলায় ১৭৯ জন রোগী শনাক্ত হয়। আগের সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছিল ৭৩ জন।
ঈদে অনেক মানুষ ঢাকা থেকে নিজ নিজ গ্রাম এলাকায় গিয়েছিলেন। লোকসমাগমও আগের চেয়ে বেশি হয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার এটি একটি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দেখছেন। তাঁরা ঈদের আগেই এই শঙ্কার কথা বলেছিলেন। এর সঙ্গে করোনার ভারতীয় ধরনের (ভেরিয়েন্ট) কোনো যুক্ততা আছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের ঘোষণা দেওয়া হয়। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল থেকে গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ঘোষণা করে সরকার। অনেকটা শিথিল হলেও সেই বিধিনিষেধ এখনো চলছে। বিধিনিষেধের প্রভাবে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ২৯ এপ্রিল পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমেছিল। ১১ দিন ধরে রোগী শনাক্তের হারে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
//ইয়াসিন//